বিসমিল্লাহির রহমানীর রহিম।।।।।। যদি প্রশ্ন করা হয়, মানুষের আসল শত্রু কে? সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, “অবশ্যই শয়তান, ইবলিস!!!” কিন্তু এই ইবলিস সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? যে সেনাবাহিনী তাঁর শত্রুকে চিনতে পারেনা, সেই বাহিনী অবশ্যই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। আসুন আমরা শয়তানকে চিনি, ইবলিসের শয়তানী মুলনীতি সম্পর্কে জানি। পবিত্র কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে, ইবলিস আল্লাহপাক কে বলছে,
“সে (শয়তান)বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।” (১৫ঃ৩৯)
“হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। (৭ঃ২৭)”
“তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে। আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (৬ঃ১৪২)”
শয়তান ধোকা দেয় যে ভাবে
শয়তান সেই অন্তরেই খুব সহজে আস্তানা গাড়ে, যেই অন্তর অহঙ্কার, অহমিকায় ছেয়ে আছে। নিজের ভুলকে স্বীকার করতে না পারা, নিজের ভুলকে Justify করার জন্য তর্কে লিপ্ত হওয়া, এগুলো হল ভয়ানক অহঙ্কারের লক্ষণ। অন্তর তখনই মরে যায়, তখনই অন্তরে সীলগালা লেগে যায়, যখন মানুষ নিজের দোষ মেনে নেয়া তো দুরের কথা, বরং দোষ ধরিয়ে দিলে উল্টো রেগে বসে। এ ধরণের অন্তরই হল শয়তান তথা ইবলিসের সহজ স্বীকার। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন-আমীন।
দারীদ্রের ভয়ঃ
শয়তান মানুষকে দারীদ্রের ভয় দেখিয়ে গোনাহ্র কাজে লিপ্ত করে। উপার্জন না থাকলে পরিবার, বাচ্চা, বাবা, মা এরা কি খাবে? বাড়ি গাড়ি না থাকলে বাচ্চা কাচ্চারা কিভাবে চলবে ইত্যাদি এইসব দুশ্চিন্তা শয়তান মানুষের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে হারাম কাজে লিপ্ত করে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
“শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ। (২ঃ২৬৮)“
পাপকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে।
“আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না। (২৭ঃ২৪)“
“আল্লাহর কসম, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্ম সমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১৬ঃ৬৩)“
উপরের আয়াতগুলোর দ্বারা শুধু যিনা, মদ, নেশাজাতীয় ইত্যাদি গুনাহকে বোঝানো হয়নি, বরং এর চেয়ে বেশী কিছু বোঝানো হয়েছে। বেশীরভাগ সময় শয়তান নেক সুরতে ধোকা দিয়ে থাকে। শয়তান অনেক সময় মানুষকে বেশী বেশী সালাত, সাওম, সদকা করারও উৎসাহ দিয়ে থাকে, কিন্তু সেই আমল গুলো ধংস করে দেয় আমলের ভেতর রিয়া ঢুকিয়ে, এখলাস নষ্ট করে দিয়ে। রিয়াযুক্ত আমল বা এখলাস বিহীন আমলগুলো শয়তান সবার কাছে আকর্ষণীয় করে দেখায়। শয়তানের লক্ষ্য হল মানুষের অন্তরকে কলুষিত করা, মানুষের আমল নয়।
শয়তান মানুষকে মিথ্যা আকাঙ্কখায় ব্যতিব্যস্ত রাখে
“আর আমি নিশ্চয়ই তাদের পথভ্রান্ত করবো, আর তাদের মধ্যে জাগাবো ব্যর্থ-কামনা,…………(৪ঃ১১৯)”
অর্থাৎ শয়তান মানুষকে মিথ্যা ও ব্যর্থ কামনা বাসনায় ডুবিয়ে রেখে পথভ্রষ্ট করে দিবে।
অপ্রয়োজনীয় কাজে কর্মে নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে
“……তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।……” (৪ঃ১১৯)
(তাফসীর নোটঃ এবং আমি (শয়তান) তাদেরকে এমনভাবে পথভ্রষ্ট ও সন্দেহের মধ্যে আবর্তিত করব। আমি কসম খাচ্ছি, তাদেরকে আমি এমনভাবে অমূলক আশা এবং সাফল্যের মরীচিকায় রাখব যে, তারা অন্ধের মত সেই অমূলক স্বপ্নের পিছনে ছুটে বেড়াবে। যখন আমি মানুষের অন্তরে এভাবে মিথ্যা আশা ভরে পরিপূর্ণ করে দেব, তখন আমি তাদের কাছে এমন অবস্থায় চলে যাবো যে, মানুষ আমার কথামত কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। আমিও তাদের বলতে থাকব কি করতে হবে। আমি তাদের দিয়ে বাছুরের কান কাটাবো, ভাগ্য বদলানোর জন্য ন্যাক্বারজনক কাজে লিপ্ত করব, শেষ পর্যন্ত তাদেরকে দ্বীন থেকে বের করে ছাড়বো। আমি আরো করব, করতেই থাকব, ক্ষ্যান্ত হবনা।)
শয়তান তার শিকারকে ধীরে ধীরে বধ্ করে
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে।………… (২৪ঃ২১)” এ ধরনের আরো আয়াত আছে, যেমনঃ ২ঃ১৬৮,২ঃ২০৮, ৬ঃ১৪২ ইত্যাদি।
তাফসীর নোটঃ শয়তান মানুষকে হালাল থেকে হারামের পরিসরে নেয়ার জন্য- প্রথমে খারাপ কাজের suggestion দিতে থাকে এবং ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। এভাবে সে suggestion authority থেকে Commanding Authority তে উন্নীত হয়। এরপর শয়তান মানুষকে অশ্লীলতা এবং নিকৃষ্ট কাজের আদেশ দেয়। এরপর সে মানুষকে দিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে এমন বিষয় বলায়, যা আল্লাহ পাক কখনো বলেন নি, যা আল্লাহ পাকের পক্ষ্য থেকেও নয়। এরপর সে মানুষকে দিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলায়, যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই অথবা কোন দলীল বা প্রমাণ ও নেই।
আল্লাহু আলিম
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার শেয়ারে যারা যারা উপকৃত হবেন, তাদের সওয়াব আপনিও পাবেন।