Learn Quran Online
একজন মানুষের জবান বা মুখ তার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। জবান বা মুখের মাধ্যমেই একজন মুমিন তার জীবনে সর্বপ্রথম কালিমার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে, যা প্রত্যক্ষ ঈমানের পরিচায়ক।
কিন্তু এই সামান্য মুখ আবার তেমনি মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের প্রিয় নবী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুইটি অঙ্গের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আখিরাতে তার জান্নাতের ব্যাপারে জামিন হয়ে যাবেন। সেই দুইটি অঙ্গের একটি হলো জবান বা মুখ অথবা জিহ্বা।
তাই জিহ্বা বা মুখ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
নিজের মুখ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাহাবারা যেমন ছিলেন খুবই সতর্ক তেমনি ভাবে সতর্ক ছিলেন তাবেঈ তাবে তাবেঈন এবং আমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণ।
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা বলতেন চুপ থাকতে শেখো।
(শুয়াবী আল ইমান)
হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন,
ঠিক তেমনি ভাবে চুপ থাকতে শেখো যেমনিভাবে তুমি কথা বলতে শিখেছ।
মাকারিম আর আখলাক।
নীরবতা বা চুপ থাকা দুই ধরনের হয়।
এক ধরনের মৌনতা বা নীরবতা হলো, কথা বলার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নীরব থাকা। এটাকে আরবিতে সুমত বলে। আর কথা বলার সামর্থ্য না থাকার কারণে যে নীরবতা অবলম্বন করা হয় তাকে সুকুত বলা হয়।
নিরবতা অবলম্বন করার ফায়দা বা গুন, তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ধরা হয় যার কথা বলার পূর্ণ ক্ষমতা আছে। যদি কেউ নীরবতা পালন করার এই গুণটি আয়ত্ত করতে পারে তাহলে তার দুনিয়া এবং আখিরাতে অশেষ কল্যাণ লাভ হয়।
এ গুণ অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে
আমাদের পূর্ববর্তী নেককারগন নীরবতা পালনের এই গুণটি অর্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। সেই সাথে নিজের জীবনে এর প্রয়োগ ঘটাতেন। আমাদের পূর্ববর্তী নেককারগনের মধ্যে একজন, যার নাম ইয়াস বিন ঈজলী রহ: বলেছেন,
নীরবতা পালন আয়ত্তে আনার জন্য তিনি দীর্ঘ ১০ বছর কঠিন মুজাহাদা করেছেন।
শ্রুত
অর্থাৎ তিনি নীরবতা পালন কে নিজের ভিতর গেঁথে নিয়েছিলেন। আমরা সাধারণত যখন চুপ থাকতে চাই তখন আমাদের নিজের নফস বা মনকে মনে করিয়ে দিই যে এখন চুপ থাকতে হবে। কিন্তু ইয়াস ইজিলি নিজেকে এমন কঠিন ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যে তার ভিতরে চুপ থাকাটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য আকারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
https://musafiron.com/tag/quran/
তবে এই চুপ থাকা কিন্তু স্বাভাবিক মানুষের সাথে কথোপকথনের সময় চুপ থাকা নয়। অর্থাৎ কেউ আপনাকে কোন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল অথবা আপনার কুশলাদি জিজ্ঞেস করল কিন্তু আপনি চুপ থাকলেন, এটা নয়। বরংচ সেসব বিষয় থেকে নিজেকে নিরব রাখা যেসব বিষয়ে নিজের এবং অন্যদের মাঝে ফিতনা চলে আসে। যেমন কারো গীবত এ অংশগ্রহণ করা অথবা এমন কোনো সংবাদে অংশগ্রহণ করা যার সত্য বা মিথ্যা হবার কোন প্রমাণ নেই।
অর্থাৎ বোঝা গেল এ ধরনের নীরবতা অবলম্বন এর কঠিন প্রশিক্ষণের ফলে, একজন মানুষের মাঝে যে যোগ্যতা তৈরি হবে, তাতে সে নিজেকে গুনাহ তো দূরের কথা বরং ফিতনা এবং সন্দেহজনক বস্তু থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হবে।
চুপ থাকার ফজিলত অনেক বেশি।
যে ব্যক্তি তার মুখ সংবরণ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার অন্তর শক্তিশালী হতে থাকে। তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার মনস্তাত্ত্বিক পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। আমাদের পূর্ববর্তী নেককার বা সালাফগণ এ বিষয়টি খুব পালন করতেন এবং আমাদেরকে এ ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে গেছেন। কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে কোন কোন সালাফ এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত কয়টি কথা বলেছেন বা কতগুলো কথা বলেছেন তা গুনে রাখতেন। এতে বোঝা যায় তারা এ ব্যাপারে কত সিরিয়াস ছিলেন। এজন্যই আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের অন্তর ছিল পর্বতের ন্যায় অটল। কোন কিছুই তাদের ঈমানকে টলাতে পারেনি।
চুপ থেকে আরেকটা বড় ফজিলত হলো যে ব্যক্তি চুপ থাকা কে নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিয়েছে, সে যখনই কথা বলবে কম কথা বলবে, কিন্তু তার কথা হবে অনেক দামি, ভারী এবং মণিমাণিক্য খচিত। অর্থাৎ তার অল্প কথায় মানুষের অনেক উপকার হবে।
বাস্তবে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, যে সমস্ত বান্দারা খুব কম কথা বলে তারা স্বভাবতই দ্বীনদার হয়। তাদের মাঝে বদ গুন বা গুনাহের চিহ্ন পাওয়া যায় না বললেই চলে। অপরদিকে যারা বদকার হয়ে থাকে তারা খুব বেশি কথা বলে। এদের বেশিরভাগই বাচাল হয়। আর যে বেশি কথা বলে তার অন্তর দুর্বল হয়ে যায়, তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
তাই মহান আল্লাহ তায়ালার একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত নিজের মুখ নিজের মুখ এবং জবানকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্রমাগত প্রশিক্ষণ নেয়া।