দাজ্জাল সম্পর্কে কয়েকটি জরুরী হাদিস Leave a comment

দাজ্জাল, শেষ যামানার সবচেয়ে ভয়াবহতম ফিতনাহ। প্রত্যেক নবী-রাসুল গণ দাজ্জালের ব্যাপারে তাদের ক্বওম এবং উম্মাহকে সতর্ক করে গিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) আমাদের কে একইভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি আমাদেরকে প্রত্যেক নামাযে বা সালাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য দুয়া ও করতে বলেছেন। নিচে দাজ্জাল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করা হল।

হাদিস নং-০১। সালামের পূর্বে দু’আ।

আবূল ইয়ামান (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে দু’আ করতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা বিকা মিন আজাবিল কাবার, অয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহ দাজ্জাল, অয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহিয়া অয়া ফিতনাতিল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনল মাসামি ওয়াল মাগরাম

অর্থঃ “কবরের আযাব থেকে, মসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে ইয় আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্থতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।

তখন এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্থতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন কোন ব্যাক্তি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।

সহীহ বুখারী, ৭৯৪

হাদিস নং-০২। দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না

حدثنا عبد العزيز بن عبد الله، قال حدثني إبراهيم بن سعد، عن أبيه، عن جده، عن أبي بكرة ـ رضى الله عنه ـ عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ‏ “‏ لا يدخل المدينة رعب المسيح الدجال، لها يومئذ سبعة أبواب، على كل باب ملكان ‏”‏‏.‏

‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদল্লাহ (রহঃ) … আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনাতে দাজ্জালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফিরিশতা (মোতায়েন) থাকবে।

বুখারী, ১১৭৮

হাদিস নং-০৩। দাজ্জালের প্রতি সবচেয়ে কঠোর হবে যে গোত্র

حدثنا زهير بن حرب، حدثنا جرير، عن عمارة بن القعقاع، عن أبي زرعة، عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ قال لا أزال أحب بني تميم‏.‏ وحدثني ابن سلام أخبرنا جرير بن عبد الحميد عن المغيرة عن الحارث عن أبي زرعة عن أبي هريرة‏.‏ وعن عمارة عن أبي زرعة عن أبي هريرة قال ما زلت أحب بني تميم منذ ثلاث سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول فيهم، سمعته يقول ‏”‏ هم أشد أمتي على الدجال ‏”‏‏.‏ قال وجاءت صدقاتهم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏”‏ هذه صدقات قومنا ‏”‏‏.‏ وكانت سبية منهم عند عائشة‏.‏ فقال ‏”‏ أعتقيها فإنها من ولد إسماعيل ‏”‏‏.‏

যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু সালাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি কথা শোনার পর থকে বনী তামীম গোত্রকে আমি ভালোবেসে আসছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, দাজ্জালের মুকাবিলায় আমার উম্মতের মধ্যে এরাই হবে অধিকতর কঠোর। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার তাদের পক্ষ থেকে সাদকার মাল আসলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ যে আমার কওমের সাদকা। ‘আয়িমা (রাঃ)-এর হাতে তাদের এক বন্দিনী ছিল। তা দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে আযাদ করে দাও। কেননা সে ঈসমাইলের বংশধর।

বুখারী ,২৩৭৫

হাদিস নং-০৪। দাজ্জাল কানা হবে

حدثنا عبدان، أخبرنا عبد الله، عن يونس، عن الزهري، قال سالم وقال ابن عمر ـ رضى الله عنهما قام رسول الله صلى الله عليه وسلم في الناس فأثنى على الله بما هو أهله، ثم ذكر الدجال، فقال ‏ “‏ إني لأنذركموه، وما من نبي إلا أنذره قومه، لقد أنذر نوح قومه، ولكني أقول لكم فيه قولا لم يقله نبي لقومه، تعلمون أنه أعور، وأن الله ليس بأعور ‏”‏‏.‏

আবদান (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, তারপর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার থেকে সতর্ক করছি আর প্রত্যেক নাবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নূহ (আলাইহিস সালাম)ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোন নাবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি। তা হল তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কানা, আর আল্লাহ কানা নন।

বুখারী, ৩১০১

হাদিস নং-০৫। দাজ্জালের জান্নাত আসলে জাহান্নাম

حدثنا أبو نعيم، حدثنا شيبان، عن يحيى، عن أبي سلمة، سمعت أبا هريرة ـ رضى الله عنه ـ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ ألا أحدثكم حديثا عن الدجال ما حدث به نبي قومه، إنه أعور، وإنه يجيء معه بمثال الجنة والنار، فالتي يقول إنها الجنة‏.‏ هي النار، وإني أنذركم كما أنذر به نوح قومه ‏”‏‏.‏

আবূ নুআঈম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দেব না, যা কোন নাবীই তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি? তা হল, নিশ্চয়ই সে হবে কানা, সে সাথে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দু’টি কৃত্রিম ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে এটি জান্নাত প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের ঠিক তেমনি সতর্ক করছি, যেমন নূহ (আলাইহিস সালাম) তার সম্প্রদায়কে সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

বুখারী, ৩১০২

হাদিস নং-০৬। দাজ্জালের কাছে রুটির পাহাড় থাকবে

حدثنا مسدد، حدثنا يحيى، حدثنا إسماعيل، حدثني قيس، قال قال لي المغيرة بن شعبة ما سأل أحد النبي صلى الله عليه وسلم عن الدجال ما سألته وإنه قال لي ‏”‏ ما يضرك منه ‏”‏‏.‏ قلت لأنهم يقولون إن معه جبل خبز ونهر ماء‏.‏ قال ‏”‏ هو أهون على الله من ذلك ‏”‏‏.‏

মুসাদ্দাদ (রহঃ) … মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত বেশি প্রশ্ন করতাম সেরূপ আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেনঃ তা থেকে তোমার কি ক্ষতি হবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে, তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে তা অতি সহজ।

বুখারী, ৬৬৩৭

হাদিস নং-০৭। দাজ্জাল মদিনার এক পার্শ্বে অবতরণ করবে

حدثنا سعد بن حفص، حدثنا شيبان، عن يحيى، عن إسحاق بن عبد الله بن أبي طلحة، عن أنس بن مالك، قال قال النبي صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يجيء الدجال حتى ينزل في ناحية المدينة، ثم ترجف المدينة ثلاث رجفات، فيخرج إليه كل كافر ومنافق ‏”‏‏.‏

সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মদিনার এক পার্শ্বে অবতরণ করবে। (এ সময় মদিনা) তিনবার প্রকম্পিত হবে। তখন সকল কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে তার কাছে চলে আসবে।

বুখারী, ৬৬৩৯

হাদিস নং-০৮।মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে

حدثنا يحيى بن يحيى، قال قرأت على مالك عن نافع، عن عبد الله بن عمر، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ‏ “‏ أراني ليلة عند الكعبة فرأيت رجلا آدم كأحسن ما أنت راء من أدم الرجال له لمة كأحسن ما أنت راء من اللمم قد رجلها فهي تقطر ماء متكئا على رجلين – أو على عواتق رجلين – يطوف بالبيت فسألت من هذا فقيل هذا المسيح ابن مريم ‏.‏ ثم إذا أنا برجل جعد قطط أعور العين اليمنى كأنها عنبة طافية فسألت من هذا فقيل هذا المسيح الدجال ‏”‏ ‏.‏

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

একরাতে (স্বপ্নে) আমি কা’বা শরীফের কাছে আমাকে দেখতে পেলাম। গৌরবর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যতলোক তোমরা দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। ঘাড় পযন্ত লম্বা কেশ ছিল তাঁর। এ ধরনের কেশের অধিকারী যত ব্যাক্তি তোমরা দেখেছ, তাদের মধ্যে তিনি হলেন সবচেয়ে সুন্দর। তিনি এ কেশ আচড়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দু-জনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দূ-জনের কাঁধের উপর ভর করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হলঃ ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তারপর দেখি আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোঁকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা, যেন একটি আঙ্গুর (থোকা থেকে উপরে উঠে আছে) জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হচ্ছে মাসীহুদ্‌ দাজ্জাল।

মুসলিম, ৩২২

হাদিস নং-০৯। বিপদাপদের কারণে মৃত ব্যক্তির স্থানে হওয়ার বাসনা করবে

حدثنا قتيبة بن سعيد، حدثنا عبد العزيز، – يعني ابن محمد – عن ثور، – وهو ابن زيد الديلي – عن أبي الغيث، عن أبي هريرة، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال ‏”‏ سمعتم بمدينة جانب منها في البر وجانب منها في البحر ‏”‏ ‏.‏ قالوا نعم يا رسول الله ‏.‏ قال ‏”‏ لا تقوم الساعة حتى يغزوها سبعون ألفا من بني إسحاق فإذا جاءوها نزلوا فلم يقاتلوا بسلاح ولم يرموا بسهم قالوا لا إله إلا الله والله أكبر ‏.‏ فيسقط أحد جانبيها ‏”‏ ‏.‏ قال ثور لا أعلمه إلا قال ‏”‏ الذي في البحر ثم يقولوا الثانية لا إله إلا الله والله أكبر ‏.‏ فيسقط جانبها الآخر ثم يقولوا الثالثة لا إله إلا الله والله أكبر ‏.‏ فيفرج لهم فيدخلوها فيغنموا فبينما هم يقتسمون المغانم إذ جاءهم الصريخ فقال إن الدجال قد خرج ‏.‏ فيتركون كل شىء ويرجعون ‏”‏ ‏.‏

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

তোমরা কি ঐ শহরের কথা শুনেছ, যার এক প্রান্তে স্থল ভাগে এবং এক প্রান্তে সাগরে? তারা (সাহবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! শুনেছি। অতঃপর বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত ইসহাক (ইসমাইল) (আলাইহিস সালাম) এর সন্তানদের সত্তর হাজার লোক এ শহরের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করবে। তারা শহরের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়ে কোন অস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করবে না এবং কোন তীরও চালাবে না; বরং তারা একবার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে; অমনি এর একপ্রান্ত পতিত (পদানত) হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী সাওর (রহঃ) বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে, আমার কাছে বর্ণনাকারী ব্যক্তি সাগর প্রান্তের কথা বলেছিলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার তারা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে। এতে শহরের অপর প্রান্ত পতিত (পদানত) হয়ে যাবে। এরপর তারা তৃতীয় বার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে তখন তাদের জন্য (নগর তোরণ) খুলে দেয়া হবে। তখন তারা সেখানে (প্রচুর) গনীমত লাভ করবে। তারা যখন গনীমতের মাল বন্টনে ব্যস্ত থাকবে, তখন কেউ চীৎকার করে ঘোষণা করবে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে। এ কথা শুনতেই তারা সব কিছু ফেলে প্রত্যাবর্তন করবে।

মুসলিম, ৭০৬৯

হাদিস নং-১০। দাজ্জালের আর্বিভাব সম্পর্কে

حدثنا صفوان بن صالح الدمشقي المؤذن، حدثنا الوليد، حدثنا ابن جابر، حدثني يحيى بن جابر الطائي، عن عبد الرحمن بن جبير بن نفير، عن أبيه، عن النواس بن سمعان الكلابي، قال: ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم الدجال، فقال: إن يخرج وأنا فيكم فأنا حجيجه دونكم، وإن يخرج ولست فيكم، فامرؤ حجيج نفسه، والله خليفتي على كل مسلم، فمن أدركه منكم فليقرأ عليه فواتح سورة الكهف، فإنها جواركم من فتنته، قلنا: وما لبثه في الأرض؟ قال: أربعون يوما: يوم كسنة، ويوم كشهر، ويوم كجمعة، وسائر أيامه كأيامكم، فقلنا: يا رسول الله، هذا اليوم الذي كسنة، أتكفينا فيه صلاة يوم وليلة؟ قال: لا، اقدروا له قدره، ثم ينزل عيسى ابن مريم عند المنارة البيضاء شرقي دمشق، فيدركه عند باب لد، فيقتله

আন-নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-কিলাবী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেনঃ

আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয় তবে তোমাদের পক্ষ থেকে আমিই তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকা অবস্থায় যদি সে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেই তার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আর আল্লাহ হবেন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পক্ষে দায়িত্বশীল। তোমাদের মাঝে যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন সূরা আল-কাহফের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে; কেননা এটাই হবে ফিতনা থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়। আমরা বললাম, সে পৃথিবীতে কতদিন থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান ও একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর বাকী দিনগুলো হবে তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর সমান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে একদিন ও এক রাতের সালাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সালাত পড়বে)। অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং ‘লুদ্দ’ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন।

আবু দাউদ, ৪৩২১

হাদিস নং-১১। জাসসার প্রসঙ্গে

ফাতিমাহ বিনতু কাইস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,

আমি শুনতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে, সালাতের জন্য সমবেত হও। অতএব আমি বেরিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসতে হাসতে মিম্বারের উপর বসে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে থাকো। পুনরায় বললেনঃ তোমরা কি জানো, কেন আমি তোমাদের একত্র করেছি? উপস্থিত সকলেই বললো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানে। তিনি বললেনঃ কোনো ভয়-ভীতি বা কোনো কাঙ্ক্ষিত বস্তুর জন্য আমি তোমাদের একত্র করিনি; বরং তোমাদের একত্র করেছি এজন্য যে, তামীম আদ-দারী খৃষ্টান ছিলো। সে এসে বাই‘আত করে মুসলিম হয়েছে, আর আমাকে দাজ্জাল সম্পর্কে এরূপ একটি ঘনা শুনিয়েছে, আমি তোমাদের নিকট সে সম্পর্কে যা বলেছি, তার অনুরূপ। সে বলেছে, একদা সে ‘লাখম ও জুযাম’ গোত্রের তিরিশজন লোকের সঙ্গে সমুদ্রযানে ভ্রমণ করছিল। এ সময় সমুদ্র তরঙ্গ তাদের নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করে সূর্যাস্তের সময় উপকূলের দ্বীপে ভিড়িয়ে দেয়। অতঃপর তারা জাহাজের নিকট কিছুক্ষণ বসে থেকে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা ঘন-লম্বা লোমবিশিষ্ট এক জন্তুর সাক্ষা পেয়ে বললো, তোমার জন্য দুঃখ হয় তুমি কে? সে বললো, আমি জাস্‌সাসা, তোমার এই মন্দিরের লোকটির নিকট যাও, কেননা সে তোমাদের সংবাদের জন্য খুবই আগ্রহী। তামীম আদ-দারী বলেন, যখন সে একটি লোকের নাম বলে দিলো, তখন সে শয়তান কি না এই ভয়ে আমরা দ্রুতগতিতে চলতে লাগলাম। অতঃপর মন্দিরে প্রবেশ করে দেখলাম, বিরাট দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি। এরূপ মজবুত গড়ন এবং কঠিন আকৃতির লোক ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। তার দু’টি হাত ঘাড়ের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে বাঁধা। অতঃপর তিনি হাদীস বর্ণনা করেন যে, সে তাদের নিকট ‘বাইসান’ এর খেজুর বাগান ও যুগার ঝর্ণা সম্পর্কে, আর উম্মী নবীর আবির্ভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললো, আমিই মাসীহ (দাজ্জাল)। শিঘ্রই আমাকে বেরিয়ে আসার অনুমতি দেয়া হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেটা নিশ্চয়ই সিরিয়া বা ইয়ামেন সাগরে হবে, না বরং সেটা প্রাচ্যের  দিকে হবে। একথা তিনি দু‘বার বলেন এবং পূর্ব দিকে ইশারা করে দেখান। তিনি (ফাতিমাহ) বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে মুখস্থ করেছি।

আবু দাউদ, ৪৩২৬

হাদিস নং-১২।দাজ্জালের অনুসারী

حدثنا منصور بن أبي مزاحم، حدثنا يحيى بن حمزة، عن الأوزاعي، عن إسحاق، بن عبد الله عن عمه، أنس بن مالك أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ‏ “‏ يتبع الدجال من يهود أصبهان سبعون ألفا عليهم الطيالسة ‏”‏ ‏.‏

মানসূর ইবনু আবী মুযাহিম (রহঃ) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

আসবাহান এর সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে, তাদের শরীরে (তায়ালিসাহ) কালো চাদর থাকবে।

মুসলিম, ৭২৮২

হাদিস নং-১৩।দাজ্জালের আগমনের পূর্বে মুসলিমগণ যে সকল বিজয় অর্জন করবে

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. নাফি ইবনু উতবাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

এক যুদ্ধে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন পশ্চিম দিক হতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক দল লোক আসলো। তাদের শরীরে ছিল পশমের কাপড়। তারা এক টিলার কাছে এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে দেখা করল। এ সময় তারা ছিল দাঁড়ানো এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বসাবস্থায়। তখন আমার মন আমাকে বলল, তুমি যাও এবং তাদের ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে গিয়ে দাঁড়াও, যেন তারা প্রতারণা করে তাকে হত্যা করতে না পারে। আবার আমার মনে হলো, সম্ভবতঃ তিনি তাদের সঙ্গে কোন গোপন আলাপরত আছেন। তথাপিও আমি গেলাম এবং তাদের ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমন সময় আমি তার থেকে চারটি কথা আয়ত্ত করলাম এবং তা আমার হাত দ্বারাই গণনা করলাম। তিনি বললেন, তোমরা জাযিরাতুল আরবে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তা বিজিত করে দিবেন। অতঃপর পারস্যবাসীদের সঙ্গে লড়াই করবে, আল্লাহ তাও তোমাদের আয়ত্তে এনে দিবেন। এরপর রোমীয়দের সঙ্গে লড়াই করবে, আল্লাহ তা’আলা এতেও তোমাদের বিজয় দান করবেন। পরিশেষে তোমরা দাজ্জালের সঙ্গে লড়াই করবে, এখানেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন। বর্ণনাকারী নাফি’ (রহঃ) বলেন, হে জাবির! আমাদের মনে হয় রোম বিজিতের পর দাজ্জালের আগমন ঘটবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০২০, ইসলামিক সেন্টার ৭০৭৭)

মুসলিম, ৭১৭৬

হাদিস নং ১৪। সূরাহ্ আল কাহফ এর ফাযীলাত

وحدثنا محمد بن المثنى، حدثنا معاذ بن هشام، حدثني أبي، عن قتادة، عن سالم، بن أبي الجعد الغطفاني عن معدان بن أبي طلحة اليعمري، عن أبي الدرداء، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال ‏ “‏ من حفظ عشر آيات من أول سورة الكهف عصم من الدجال ‏”‏

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ….. আবূদ দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

যে ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনাহ থেকে নিরাপদ থাকবে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৩, ইসলামীক সেন্টার. ১৭৬০)

মুসলিম, ১৭৬৮

হাদিস নং ১৫। দাজ্জাল, তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকবে তার বিবরণ

আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাবী (রহঃ) … নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনাকালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন, আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন। ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে। অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্থা? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক আশংকা করছি।

শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক। দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।

এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ’জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।

অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু’ফাঁক করে ফেলবে। অতঃপর সে পুনরায় তাকে ডাকবে। যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই ফিরিশতার কাঁধের উপর ভর করে লাল-গোলাপী (জাফরানী) রং এর জোড়া পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শ্বেত মিনারের উপর অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদুর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে লুদুদ নামক আরণ্যের কাছে পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন। তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার এমন কিছু বিশেষ বান্দা আবির্ভূত করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদের তূর পর্বতে সমবেত কর। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন। তারা প্রতি উঁচু ভূমি হতে ছুটে আসবে। তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান উপসাগরের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দ্বীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট প্রতিপন্ন হবে।

তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তারাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে।

এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই তাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে পরিচ্ছন্ন পিচ্ছিল মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্নবতী একটি উটই ছোট ছোট অনেক গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী এক বড় গোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের (গোষ্ঠীর) জন্য। এ সময় আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলমানদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

(মুসলিম, ৭১০৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close