একটি ছোট গল্প (গল্পের চরিত্র কাল্পনিক) Leave a comment












আব্দুস সামাদ সাহেব ঢাকার পরীবাগ এলাকায় বসবাস করেন। অত্যন্ত সাদাসিধে একজন মানুষ। খুবই সৎ। নিজেকে কোন রকম ঝামেলায় জড়াতে চান না। এবং আল্লাহর রহমতে ঝামেলাতেও পড়েন না। তার দুই ছেলে। দুজনেই খুব মেধাবী। দুজনেই ভালো স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আব্দুস সামাদ সাহেব পাঁচ উয়াক্ত নামায আদায় করেন, রমযানের রোযা রাখেন এবং সাধ্যমত দান খয়রাত করেন। এক কথায় তিনি একজন আদর্শ মানুষ। তার এলাকায় বাস করেন কবীর সাহেব। তিনই একজন বিশিষ্ট উদ্যোক্তা। তার বেশ কয়েকটা কারখানা রয়েছে। তিনি নিজেকে Moderate মুসলিম বলে দাবী করেন। নামায পরেন না। রমাযান আসলে দু একটা রোযা রাখেন। তার কথা হল, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ভ্রান্তির ধর্ম নয়। ইসলাম কট্টরপন্থীদের ধর্ম ও নয়। যারা শুধু নামায, রোযা নিয়ে আওয়াজ দেয়, কোরআনকে সবখানে টেনে আনে, তারাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। 
বাহির থেকে কবীর সাহেবকে দেখে অনেক সুখী মনে হলেও, তার হৃদয়ে একটা চাপা কষ্ট রয়েই গেছে। তার এক সন্তান অটিস্টিক।

আব্দুস সামাদ সাহেব প্রায়ই কবীর সাহেবের কথা ভাবেন আর মনে মনে বলেন কবীর সাহেব কতই না বিভ্রান্তিতে আছে। উনি ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এলাকার মসজিদের ইমাম মাওলানা কাশেম সাহেব।ইসলাম সম্পর্কে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য। খুব সুন্দর বয়ান দেন।  হক্ব কথা বলতে ছাড়েননা। এজন্য মহল্লার অনেকেই তাঁর উপর বিরক্ত, ক্ষ্যাপা। তবে কেউ কিছু বলতে পারেননা। কারণ, মাওলানা সাহেব নিজের থেকে মন গড়া কোন কিছুই বলেননা। তাঁর প্রত্যেকটি কথাতেই কোরআন ও হাদীসের দলীল থাকে। তবে কাশেম সাহেবের ব্যক্তিগত জীবন অত্যন্ত সংগ্রামপূর্ণ। তাঁর চার সন্তান। কদিন আগেই তাঁর ছোট সন্তান বিরাট বড় একটা রোগের ফাড়া হতে মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছে। ঘরে অভাব অনটন লেগেই আছে। রুমী নামক একজন ২০ বছর বয়সী তরুন কাশেম সাহেবের খুব ভক্ত। রুমী একদিন দুপুরে খাবার সময় কাশেম সাহেবের বাসায় না বলে যায়। গিয়ে দেখে কাশেম সাহেব তাঁর সন্তানদের নিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। খাবারের মেন্যু হল সাদাভাত আর কচু শাক। এমনকি ডাল ও নাই। এ দৃশ্য দেখে রুমীর চোখ দুটো কেন জানি ঝাপসা হয়ে যায়।  সে তৎক্ষণাৎ বাহির হোটেল থেকে কিছু মাংস ও সবজি কিনে আনলো। কাশেম সাহেব বার বার মানা করা সত্ত্বেও। রুমী ভেবে অবাক হয়, এত কষ্ট করে দিন কাটিয়েও কাশেম সাহেব কিভাবে এতটা সৌম্য ও শান্ত থাকেন, কিভাবে সারাক্ষণ তাঁর ঠোটে মুচকি হাসি লেগেই থাকে? কোথায় পান এতো প্রশান্তি!
আব্দুস সামাদ সাহেব এই মাওলানা কাশেম সাহেবকে অনেক শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন। কারণ তিনি একজন বিজ্ঞ আলেম। কিন্তু আব্দুস সামাদ সাহেব মাঝে মাঝে ভাবেন, মাওলানা সাহেব এতো ভালো, সৎ হওয়া সত্তেও কেন তাঁর জীবনে এতো সমস্যা। তাহলে কি তাঁর আমলে কোন সমস্যা আছে? তিনি কি ভন্ড!? নাকি বিভ্রান্ত??!! 
আমরাও অনেকেই আছি যারা আব্দসু সামাদ সাহেবের মতো ভাবি। অনেকেই বলে থাকি, “ভাই, কোন মতে ঝামেলা টামেলা ছাড়া দিন পার করে ওপারে যেতে পারলেই বাঁচি।” কোন বিপদ আপদ আসলে বিরক্ত হই। ভাবখানা এমন যেন “আমার কেন বিপদ হল, আমিতো অনেকের চেয়ে আল্লাহকে বেশী ডাকি।” 
আসলেই কি তাই! আসুন দেখি কোরআন কি বলে?…………

“এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।” (২ঃ ১৫৫)

“তোমরা কি বিবেচনা করছো যে তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ্ এখনো অবধারণ করেন নি তোমাদের মধ্যে কারা সংগ্রাম করেছে, আর যাচাই করেন নি কারা ধৈর্যশীল?” (৩ঃ ১৪২)

“………তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন।“(৩ঃ১৫৪)

অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।” (৩ঃ১৮৬)

আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।” (১৮ঃ৭)

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” (২১ঃ৩৫)

মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” (২৯ঃ২-৩)

আর আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের যাচাই করব যতক্ষণ না আমরা জানতে পারি তোমাদের মধ্যের কঠোর সংগ্রামশীলদের ও অধ্যবসায়ীদের, আর তোমাদের খবর আমরা পরীক্ষা করেছি।” (৪৭ঃ৩১)

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।” (৬৭ঃ২)


অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে পরীক্ষার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।তিনি অবশ্যই সবাইকে পরীক্ষা করবেন। কোরআনে আল্লাহপাক তাই বলেছেন। 
লা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্‌।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার শেয়ারে যারা যারা উপকৃত হবেন, তাদের সওয়াব আপনিও পাবেন। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close