শপথ ফজরের,শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার, (সূরা আল ফজর: ১-২)
ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমালের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমালই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।
এমন সুবর্ণ সুযোগ আমাদের জীবনে পরের বছর নাও আসতে পারে এবং এরকম সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হওয়া আখিরাতে অনুতাপের কারন হবে। এ ১০ দিনে অনেক আমলের কথা কোরআন এবং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
তবে সমস্ত আমলের কথা না বলে বাছাইকৃত চারটি বিষয় বা চারটি দিক লক্ষ্য রাখলে ইনশাআল্লাহ অনেক ফায়দা হাসিল হবে।
প্রথম ৯ দিন নফল রোজা রাখা
আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজের প্রথম দশদিন যে সমস্ত আমল করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন এই নয় দিন নফল রোজা রাখার ব্যাপারে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে মহান আল্লাহ পাক বলেন
সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।
তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে ১০ ই জিলহজ অর্থাৎ যেদিন কুরবানী হবে (ঈদুল আযহার দিন), সেদিন রোজা রাখা হারাম। আরাফার দিনে রোজা রাখার যে পুরস্কার বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়া।
আবু কাতাদা আল-আনসারী হতে বর্ণিত
আর আরাফাত দিবসের সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।
বেশি বেশি তাসবিহ, তাহমি্দ, তাহলিল এবং তাকবীর পাঠ করা
যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়।(সুরা হজ্জ,২৮)
৯ থেকে ১৩ জিলহজ তারিখ পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা
যার অর্থ হলো আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই।
এই আমলটা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গাতেই করা যায় এর জন্য অজু লাগে না বা পবিত্রতা ও প্রয়োজন হয় না।
পশু কুরবানী করা
যাকাতের মত এই নেসাব সম্পদ এক বছর হাতে থাকা শর্ত নয়। ওই কোরবানির তিনদিনের মধ্যেই যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো হয়ে যায় তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। কুরবানী করা হয় জিলহজের দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ দিন।
যদি কেউ এই তিন দিন ছাড়া অন্য কোন দিন এক হাজার পশুও কোরবানি করে থাকে, তবুও সেটা উদিয়া বা কোরবানী হিসেবে বিবেচিত হবে না। কোরবানি হিসেবে বিবেচিত হবে শুধুমাত্র এই তিন দিন।
কুরবানীর ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেছেন
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।(সুরা হজ্জ,৩৭)
এই দশদিন নেক আমল খুব বেশি বাড়িয়ে দেয়া
বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এ-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অসাধ্য মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এমনটি পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখ্লাস কুরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ।
জিলহজের এই দশদিন রুটিনটা কে নিজের জীবনের সাথে গেঁথে ফেলার এক সুবর্ণ সুযোগ। আমরা ইনশাআল্লাহ এই সুযোগটা নিতে পারি। তাছাড়া এখন যেহেতু ইন্টারনেটের যুগ তাই অনেকের এন্ড্রয়েড মোবাইলে কুরআনের অ্যাপ ইন্সটল করে রাখতে পারি, যাতে পথে ঘাটে অথবা গাড়িতে বা যে কোন জায়গায় যখন আমরা ফ্রী থাকবো তখন কোরআন তেলাওয়াত করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
নিজের আখলাককে সুন্দর করা
কিয়ামতের দিন মু’মিনের জন্য মীযানের পাল্লায় সদ্ব্যবহারের চেয়ে অধিক ভারি আর কিছু হবে না। আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল এবং কটুভাষীকে অবশ্যই ঘৃণা করেন।
কাজেই আমরা আমাদের চরিত্র বা আখলাককে সুন্দর করার চেষ্টা করব। আমরা পরনিন্দা, গীবত, আরেকজনের নামে মিথ্যা বলা, অযথা আড্ডা মারা, কারো সাথে বাকবিতন্ডা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকব।
দান সদকা এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া
তাই আমরা এই জিলহজের দশদিন এই শক্তিশালী ইবাদত করব। কাউকে যদি কর্জে হাসানা দিতে হয় তাহলে আমরা কর্জে হাসানা দিব।
সূরা আত-তাগাবুন এর ১৭নম্বর আয়াতে বলেনঃ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল। (সুরা তাগ্বাবুন, ১৭)
পিতা মাতার খেদমত করা এবং তাদের সম্মান করা
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ সময়মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি, জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পাছে তিনি বিরক্ত হন, এ ভেবে আমি অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত রইলাম।
একই সাথে খেতে পারি এবং অন্য সময়ে যদি তাদের সাথে একবার বা দুইবার দেখা করে থাকি এই সময় আরও বেশি দেখা করতে পারি।
দূরে থাকলে, যদি তাদেরকে ১ বার দিনে ফোন দিয়ে কথা বলে থাকি বা একবার কথা বলার অভ্যাস থাকে তাহলে এই সময়ে আরো ৩ থেকে ৪ বার বা তার চেয়ে বেশি ফোনে কথা বলে আমরা মর্যাদা হাসিল করতে পারি।
বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা
আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রাত যাপন করি। আমি তার পানি এবং তার যা প্রয়োজন তা এগিয়ে দিই। তখন তিনি আমাকে বললেন, চাও। বললাম আমি এ-ই চাই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি অধিক সিজদা দ্বারা তোমার নিজের ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এই জিলহজের শেষ দশ দিনে আসলে খুবই সহজ। কারণ যদি কেউ রোজা রাখার নিয়ত করে তাহলে তাকে তো সেহরিতে উঠতেই হয়। এখন সেহরিতে যে সময়টা ওঠা হয় তার থেকে ৫-১০ মিনিট একটু হাতে রাখলে সেই সময়টাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।
জিকিরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া
আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার ফজিলত অনেক। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উদ্দেশ্যে দুরুদ পড়তে পারি। এর ও ফজিলত অনেক অনেক বেশি।
অনেক বেশি বেশি দোয়া করা
যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।(সুরা বাক্বারাহ, ১৮৬)
জীবনে পরিবর্তন আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা
হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।(সুরা বাক্বারা, ২০৮)