সুরা কাহ্ফ কুরআনের ১৮তম সুরা। এই সুরাতে অনেক যুগ আগের কয়েকজন ঈমানদার যুবকের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা তাঁদের ঈমানকে রক্ষার জন্য গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। পরে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁরা সে গুহায় কয়েকশ বছর ঘুমিয়ে ছিল। পরবর্তীতে এই সময়ের মধ্যে তাঁরা যে শহর হতে পালিয়ে এসেছিল সে শহরের সবাই ঈমান এনেছিল। এছাড়া এই সুরাতে জুলকারনাইন, হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। নিচে সুরা কাহ্ফ পাঠের ফযিলত এবং উপকারিতা দেয়া হলঃ
১। সাহাবীর মাথার উপর এক খন্ড মেঘ। মুসনাদে আহমদে রয়েছে, এক সাহাবী এই সুরাটি পাঠ করতে শুরু করেন। তাঁর বাড়িতে এক জন্তু ছিল, সে লাফাতে শুরু করে। সাহাবী গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করে দেখেন তাঁর মাথার উপর সামিয়ানার মত একখন্ড মেঘ দেখতে পান, যা ছায়া দিচ্ছিল। তিনি এটা রাসুল (সাঃ) এর কাছে বর্ণনা করেন। রাসুল (সাঃ) তাঁকে বলেন, “তুমি এটা পাঠ করতে থাক, এটা হচ্ছে আল্লাহতাআলার পক্ষ হতে ঐ সাকীনা যা কুরআন পাঠের সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে।” (ইবনে কাসীর)
২। দাজ্জালের ফিতনা হতে সুরক্ষা। মুসনাদে আহমদে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহ্ফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করে, তাঁকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হয়। জামে তিরমিযীতে বলা হয়েছে তিনটি আয়াতের কথা। সহীহ মুসলিমে উল্লেখ হয়েছে শেষ দশটি আয়াতের কথা। সুনান নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের কথা বলা হয়েছে। হাফিয যিয়া মুকাদ্দাসীর (রঃ) ‘কিতাবুল মুখতারা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিনে সুরা কাহ্ফ পাঠ করবে, সে আট দিন পর্যন্ত ফিতনা ফ্যাসাদ হতে নিরাপত্তা লাভ করবে। এমনকি এই সময়ের মধ্যে দাজ্জাল ও এসে পড়ে তাহলে তার ফিতনা থেকেও তাঁকে রক্ষা করা হবে।(ইবনে কাসীর)
৩। নুরে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মসনাদে আহমদে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহ্ফের প্রথম ও শেষ আয়াত পাঠ করে, তাঁর পা থেকে মাথা পর্যন্ত নুর হবে। আর যে ব্যক্তি সম্পুর্ণ সুরা পাঠ করবে, সে যমীন হতে আসমান পর্যন্ত নুর লাভ করবে। ইবনে মীরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেন যে, “জুমুয়ার দিন যে ব্যক্তি সুরা কাহ্ফ পাঠ করবে, সে তাঁর পায়ের নীচ থেকে নিয়ে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নুর লাভ করবে।ওটা কিয়ামতের দিন খুবই উজ্জ্বল হবে, এবং পরবর্তী জুমুয়া পর্যন্ত তাঁর সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।” হাদীসটি গারীব এবং মাওকুফ হওয়াটাই সঠিক কথা। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন সুরা কাহ্ফ পাঠ পড়বে, তাঁর পার্শ্ব থেকে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যায়।” মুসতাদরিকে হাকীমে মারফুতে এসেছে, “যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিনে সুরা কাহ্ফ পাঠ করে, তাঁর জন্য দুই জুমুয়ার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে থাকে।” ইমাম বায়হাকীর হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি এই সুরাকে এইভাবে পড়বে যে ভাবে এটা নাযিল হয়েছে, তাঁর জন্য কিয়ামতের দিন জ্যোতি হয়ে যাবে।”
৪। ঘুমের আগে সুরা কাহ্ফ তেলাওয়াত। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমি কি তোমাদের এমন এক সুরার কথা বলবো না, যার মহত্ত্ব ও ফযীলত আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী অংশের ন্যায়? যে এই সুরা জুমুয়ার দিন পড়বে, তাঁর সেই জুমুয়া থেকে পড়ের জুমুয়া পর্যন্ত গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে, সেই সাথে আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ও মাফ করা হবে (সর্বমোট ১০ দিন)। আর কেউ ঘুমাতে যাবার আগে যদি এই সুরার শেষ পাঁচ আয়াত পড়ে, তাহলে সেই রাতে আল্লাহতাআলা সে যা চাইবে তাই দিবেন। সাহাবীরা জানতে চাইলে রাসুল (সাঃ) বললেন, সুরা আল কাহ্ফ।”
৫। তিলাওয়াতের বদলে শুনলে কি এই ফযীলত হাসিল হবে? হাদিস শরীফে বর্ণনা অনুযায়ী, সুরা কাহ্ফ তেলাওয়াতের কথা এসেছে, শোনার কথা আসেনি। কাজেই সুরা কাহ্ফের তেলাওয়াত শোনার ব্যাপারে একই ফযীলত হাসিল হবে না। তবে যারা পড়তে জানেন না, তাঁরা যদি তিলাওয়াত শুনেন; সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাদেরকে সেই সওয়াব বা ফযীলত দান করবেন বলে আশা করা যায়। কারণ আল্লাহতাআলার ভান্ডার অফুরন্ত।
(সংকলিত)