তাকওয়া কি ও কেন? Leave a comment

আরবীতে তাকওয়া শব্দটির বিশেষত্ব বিস্ময়কর। শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থ দিয়ে এটা বোঝা অসম্ভব। এ শব্দটি অনেক ব্যাপক। বড় বড় আলেমগণ বিভিন্নভাবে এই শব্দের অর্থ করেছেন।
তাকওয়ার সাধারণ অর্থ হল রক্ষা করে চলা। সেটা আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ মেনে চলা অর্থেও হতে পারে। পবিত্র কুরআনে তাকওয়া শব্দটি বহুবার এসেছে। যেখানে তাকওয়া বলতে আল্লাহপাকের আদেশ পালন এবং নিষেধ ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। 

কুরআনে তাকয়ার উল্লেখ

কুরানের অনেক জায়গায় তাকওয়ার কথা এসেছে। দুটি আয়াত নিচে উদাহরণ স্বরুপ দেয়া হলঃ 

 সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই মুত্তাক্বুন[কুরআন ২:১৭৭]

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [কুরআন ৪৯:১৩]

হাদিসে তাকওয়ার উল্লেখ

রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে, 

“যে বিষয় মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে নিয়ে যায় তা হল, তাকওয়া এবং উত্তম ব্যবহার; আর যে বিষয় মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে নিয়ে যায় তা হল, জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান।” (তিরমিযী)

তাফসির ইবনে কাছিরে উল্লেখ আছে যে, আতিয়াহ্‌ আস সাদী হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন, 

“বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাক্বী হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে, সে সব সন্দেহযুক্ত বিষয় ত্যাগ না করে, যার মাধ্যমে হারামে পতিত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।” (ইবনে মাযাহ, তিরমিযী)

হযরত আলী (রাঃ) খুব সুন্দর ও সহজভাবে তাকওয়ার সংজ্ঞা দিয়েছেন, যা বোঝা এবং আমল করা খুব সহজ। তাঁর মতে তাকওয়া হল চারটি বিষয়; একঃ আল্লাহর ভয়, দুইঃ কুরআনে যা নাযিল হয়েছে তদানুযায়ী আমল, তিনঃ অল্পে তুষ্টি, চারঃ শেষ দিবসের জন্য সদা প্রস্তুতি।

হযরত উমর (রাঃ) একবার হযরত কা’ব (রাঃ) তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কা’ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি কখনও কণ্টকময় পথে হেঁটেছেন?” হযরত উমর (রাঃ) হ্যাঁ বললে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি সেই পথ কিভাবে পার হন?” হযরত উমর (রাঃ) উত্তরে বললেন যে তিনি খুব সন্তর্পনে নিজের কাপড় গুটিয়ে সেই রাস্তা পার হন যেন কোন ভাবেই কাঁটার আঘাতে কাপড় ছিঁড়ে না যায় অথবা শরীরে না বিঁধে। হযরত কা’ব উত্তরে বললেন যে, এটাই হল তাকওয়া। দুনিয়ার জীবনে নিজেকে সমস্ত গুনাহ থেকে এভাবে বেঁচে চলাই হল তাকওয়া।  

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেছেন, “তাকওয়া হল দ্বীনের ভিত্তি, এটি ধ্বংস হয় লোভ এবং আকাঙ্খার মাধ্যমে।”

হযরত মাওলান গুলাম হাবীব (রহঃ) তাকওয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, তাকওয়া হল সে সমস্ত বিষয় পরিত্যাগ করা, যে গুলো বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে বাঁধা সৃষ্টি করে।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভের তাওফীক্ব দান করুন, আমিন।

0 Comments

  1. ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close