মহান আল্লাহর নামে যিনি পরমদয়ালু অসীম দয়াময়
শাইখ ইবনে ক্বাইয়িম(রহঃ) তাঁর কিতাব আল–ফাওয়ায়িদ এউল্লেখ করেছেনঃ
মানুষ দুনিয়াতে তিনটিদরজার যে কোন একটিদরজায় প্রবেশের মাধ্যমেজাহান্নামের দরজায় পৌঁছে যায়এবং জাহান্নামে প্রবেশকরে। দরজা তিনটিহলঃ
· ঈমানে সন্দেহ থাকাঅথবা এক্বীন না থাকা। যার কারণে আল্লাহরমনোনীত দ্বীন ইসলাম নিয়েঅন্তরে অনিশ্চয়তা সৃষ্টিহয়।
· লালসা, যার কারণেমানুষ আল্লাহর আদেশেরচেয়ে নিজের নফসের খেয়ালখুশীর প্রাধান্য দিয়েথাকে।
· ক্রোধ, যার কারণেসে অন্যের উপর জুলুমকরে থাকে।
প্রত্যেকটি গুনাহের কারণ বা উৎস খুঁজলে এই তিনটির যেকোন একটি পাওয়া যাবে। সেগুলো হলঃ
· অহঙ্কার বা আত্মম্ভরিতা, যার কারণে শয়তান আদমকে সিজদাহ্ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
· লোভ লালসা, যার কারণে আদমকে শয়তান জান্নাত থেকে বের করতে পেরেছিল।
· হিংসা বিদ্বেষ, যার কারণে আদমের এক সন্তান আরেক সন্তানকে হত্যা করেছিল।
যে ব্যক্তি এই তিনটি বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে, শয়তান তাঁকে ধোকায় ফেলতে পারবেনা ইনশাল্লাহ। কুফরী আসে অহঙ্কার থেকে, নাফরমানী বা অবাধ্যতা আসে লোভ থেকে, এবং জুলুম ও সীমালঙ্ঘন হয় হিংসা বিদ্বেষের দরুণ।
মহান আল্লাহতাআলা আদম সন্তানকে অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে সৃষ্টি করেছেন। আদম সন্তানের দুটি অংশ রয়েছে, একটি হল বাহিরের অপরটি ভিতরের। যখন আদম সন্তানের এই দুটি অংশই ঠিক থাকে, সে সফলতা লাভ করতে সক্ষম হয়। মহান আল্ললাহতাআলা আমাদেরকে চোখ দিয়েছেন দেখার জন্য, কান দিয়েছেন শোনার জন্য, নাক দিয়েছেন ঘ্রাণ নেয়ার জন্য, জিহ্বা দিয়েছেন কথা বলার জন্য, লজ্জাস্থান দিয়েছেন বৈধ ভাবে বংশ বিস্তারের জন্য, হাত দিয়েছেন শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করার জন্য, পা দিয়েছেন চলার জন্য, অন্তর দিয়েছেন বিবেককে ধারণ করার জন্য যার ভিত্তি হল সঠিক জ্ঞান কারণ সঠিক জ্ঞান ছাড়া বিবেক ভ্রান্ত, মেধা দিয়েছেন চিন্তাভাবনা করার জন্য যাতে সে যেটা বাস্তবিক প্রয়োজন সেটা গ্রহণ করতে পারে আর অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ত্যাগ করতে পারে।
দুনিয়াতে সেই সব মানুষই গোমরাহীতে পড়ে যায় যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে নিয়ে নিমগ্ন থাকে তাঁরা আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে পড়ে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ
যখন আদম সন্তান সকালে ঘুম থেকে জাগে, তাঁর দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জিহবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেঃ আমাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহতাআলাকে ভয় কর, কারণ আমরা তোমার অংশ মাত্র, যদি তুমি ঠিক থাকো তাহলে আমরা সবাই ঠিক থাকবো, আর তুমি যদি বেঁকে যাও তাহলে আমরা সবাই বেঁকে যাবো।” সূত্রঃ সুনান আত-তিরমীযি ২৪০৭, হাদিসটি সহীহ।
এর মানে হল, দেহের প্রতিটা অঙ্গ জিহবার কাছে আত্নসমর্পণ করে কারণ অন্তর জিহবার মাধ্যমেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে, জিহ্বা অন্তরের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্তর ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাঝে সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে। উপরের হাদিসে ‘……আমরা তোমার অংশ মাত্র’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, অন্যান্য অঙ্গের মুক্তি অথবা ধংস জিহবার উপর নির্ভরশীল।
সূত্রঃ আল-ফাওয়ায়িদ ১/৫৮
অন্তরের ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ
সেই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে এক তিল পরিমাণ ও ঈমান আছে, এবং সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা যার অন্তরে তিল পরিমাণ অহংকার আছে।সূত্রঃ সহীহ মুসলিম ৯১।
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
লোভ থেকে নিজেকে রক্ষা কর কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীরা লোভের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই লোভ তাদেরকে রক্তপাত করিয়েছে এবং অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করিয়েছে।সূত্রঃ সহীহ মুসলিম ২৫৭৮।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ
পরস্পরকে ঘৃণা কোরোনা, হিংসা কোরোনা, একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেয়োনা। বরং আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে হয়ে যাও।সূত্রঃ সহীহ বুখারী ৫৭১৮।